https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Trust.webp
Breaking News

জন্ম থেকে ১ বছর: মাস অনুযায়ী শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন (বাংলাদেশি বাবা-মায়ের জন্য)

top-news
  • 13 Dec, 2025
https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/eporichoy.webp

নতুন অতিথির আগমনে আনন্দের সাথে দায়িত্বও বাড়ে

আপনার কোলে এসেছে এক নতুন অতিথি। ছোট্ট হাত-পা, মায়াভরা চোখ আর গায়ের সেই মিষ্টি গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি। কিন্তু এই আনন্দের পাশাপাশি নতুন বাবা-মা হিসেবে আপনাদের মনে কাজ করছে হাজারও প্রশ্ন আর ভয়। বাবু কি ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে? ওর ওজন কি ঠিক আছে? রাতে এতবার কেন জাগছে? বাংলাদেশে আমাদের পারিবারিক কাঠামোতে মুরুব্বিদের পরামর্শের অভাব হয় না, তবে অনেক সময় পুরোনো রীতি আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাই।

জন্ম থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময়টা শিশুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়েই তার মস্তিষ্কের বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শারীরিক কাঠামোর ভিত্তি তৈরি হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে এই ১২ মাসের একটি ধাপে ধাপে (Step-by-step) গাইডলাইন বা রুটিন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাসের পর মাস শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন, তা বিস্তারিত আলোচনা করব।

পর্ব ১: নবজাতক থেকে ৩ মাস (মানিয়ে নেওয়ার সময়)

এই সময়টাকে বলা হয় "ফোরথ ট্রাইমেস্টার" বা গর্ভাবস্থার পরের তিন মাস। শিশু পৃথিবীর আলো-বাতাসের সাথে মানিয়ে নিতে সময় নেয়।

১ম মাস: শুধু ঘুম আর দুধ খাওয়া

জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ শিশু দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে।

  • খাবার: জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ (Colostrum) খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। এটি শিশুর প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া এক ফোঁটা পানিও খাওয়ানো যাবে না।

  • নাড়ির যত্ন (Umbilical Cord): নাড়িতে কোনো অ্যান্টিসেপটিক, হেক্সিসল বা তেল লাগাবেন না। এটি শুকনো রাখুন, ৭-১৪ দিনের মধ্যে এমনিতেই পড়ে যাবে। নাড়ি দিয়ে দুর্গন্ধ বা পুঁজ বের হলে দ্রুত ডাক্তার দেখান।

  • গোসল: নাড়ি না পড়া পর্যন্ত স্পঞ্জ বাথ (ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছানো) দিন। এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করান।

  • সতর্কতা: বাবুকে কেউ কোলে নেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে বলবেন। আমাদের দেশে মেহমানরা এসেই বাচ্চার মুখে চুমু দেন, যা ইনফেকশনের বড় কারণ। এটি ভদ্রভাবে এড়িয়ে চলুন।

২য় মাস: হাসির ঝিলিক ও টিকা

এখন শিশু আপনার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করবে।

  • টিকা (Vaccination): বাংলাদেশে ইপিআই (EPI) শিডিউল অনুযায়ী দেড় মাস বা ৬ সপ্তাহ বয়সে পেন্টাভ্যালেন্ট, ওপিভি, পিসিভি টিকা দিতে হয়। টিকা দেওয়ার পর বাচ্চার জ্বর আসতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল ড্রপ দিতে পারেন।

  • ম্যাসেজ: খাটি নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে সরিষার তেল বাচ্চার ত্বকের জন্য ঝাঁঝালো হতে পারে, তাই সাবধান।

  • ঘুমের রুটিন: দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝাতে দিনের বেলা ঘরে আলো রাখুন এবং রাতে ঘর অন্ধকার ও শান্ত রাখুন।

৩য় মাস: ঘাড় শক্ত হওয়া (Neck Control)

শিশু এখন উপুড় হয়ে শুলে মাথা তোলার চেষ্টা করবে।

  • টামি টাইম (Tummy Time): জেগে থাকা অবস্থায় শিশুকে পেটের ওপর শুইয়ে দিন। এটি ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশি শক্ত করতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই আপনার নজরদারিতে রাখবেন।

  • হাত চোষা: শিশু নিজের হাত মুখে দেবে। এটি তার নিজেকে শান্ত করার (Self-soothing) প্রক্রিয়া। এটি নিয়ে চিন্তিত হবেন না, শুধু হাত পরিষ্কার রাখুন।

পর্ব ২: ৪ থেকে ৬ মাস (বিকাশের নতুন ধাপ)

এই সময়ে শিশু অনেক বেশি সচল হয়ে ওঠে এবং তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে কৌতূহলী হয়।

৪র্থ মাস: গড়াগড়ি ও শব্দ করা

শিশু এখন এক পাশ থেকে অন্য পাশে ফিরতে বা 'রোল ওভার' করতে শিখবে।

  • নিরাপত্তা: বাচ্চাকে বিছানায় একা রাখবেন না। আমাদের দেশে বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা এই বয়সেই বেশি ঘটে। বালিশ দিয়ে ব্যারিকেড দিন অথবা ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করুন।

  • খেলনা: উজ্জ্বল রঙের ঝুনঝুনি বা শব্দ হয় এমন খেলনা দিন। এটি তার দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি বাড়াবে।

৫ম মাস: শক্ত খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি

যদিও ৬ মাসের আগে সলিড খাবার নিষেধ, কিন্তু শিশু এখন আপনাদের খাওয়া দেখে আগ্রহ দেখাবে।

  • দাঁতের শিরশিরানি: এই সময় মাড়িতে সুড়সুড়ি বা ব্যথা হতে পারে। শিশু সবকিছু কামড়াতে চাইবে। পরিষ্কার টিথার (Teether) বা ঠান্ডা পরিষ্কার কাপড় চিবোতে দিতে পারেন।

৬ষ্ঠ মাস: সলিড খাবারের শুরু (Weaning)

এটি শিশুর জীবনের অন্যতম বড় মাইলফলক। একে আমরা 'মুখে ভাত' বলি।

  • কী খাওয়াবেন: প্রথম দিন শুধু চালের সুজি বা চটকানো ভাত দিন। এরপর ধীরে ধীরে সবজি খিচুড়ি, ডাল, পাকা কলা বা আপেল পিউরি শুরু করুন।

  • নিয়ম: নতুন খাবার ৩ দিনের নিয়ম (3-Day Rule) মেনে দিন। অর্থাৎ একটা নতুন খাবার দিলে পর পর ৩ দিন অন্য নতুন কিছু দেবেন না। এতে অ্যালার্জি থাকলে বোঝা যাবে।

  • লবণ ও চিনি: ১ বছরের নিচের শিশুর খাবারে ভুলেও লবণ বা চিনি মেশাবেন না। এটি কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

পর্ব ৩: ৭ থেকে ৯ মাস (হামাগুড়ি ও বসতে শেখা)

শিশু এখন ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

৭ম মাস: নিজে বসা

সাহায্য ছাড়াই শিশু বসে থাকতে পারবে।

  • খাবার: খাবারের ঘনত্ব বাড়ান। ব্লেন্ড করা খাবার বাদ দিয়ে হাত দিয়ে চটকানো খাবার দিন, যাতে সে চিবানো শেখে। ডিমের কুসুম শুরু করতে পারেন।

৮ম মাস: হামাগুড়ি (Crawling)

সব শিশু হামাগুড়ি দেয় না, কেউ কেউ সরাসরি দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। দুটোই স্বাভাবিক।

  • বেবি প্রুফিং: ঘরের নিচু প্লাগ পয়েন্টগুলোতে টেপ লাগিয়ে দিন। মেঝেতে ছোট পয়সা, বোতাম বা পুঁথি যেন পড়ে না থাকে। এই বয়সের বাচ্চারা যা পায় তাই মুখে দেয়।

৯ম মাস: সেপারেশন অ্যাংজাইটি

মা চোখের আড়াল হলেই বাচ্চা কান্না শুরু করতে পারে।

  • টিপস: লুকোচুরি বা 'পিক-আ-বু' খেলুন। এতে সে বুঝবে মা চলে গেলেও আবার ফিরে আসে।

  • আঙুলের ব্যবহার: সে এখন তর্জনী ও বুড়ো আঙুল দিয়ে ছোট জিনিস (যেমন মুড়ি) ধরতে পারবে। একে 'পিন্সার গ্রাস্প' বলে। নিজ হাতে খেতে উৎসাহিত করুন।

পর্ব ৪: ১০ থেকে ১২ মাস (স্বাধীনতার দিকে যাত্রা)

আপনার সোনামণি এখন ছোট ছোট পায়ে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

১০ম মাস: আসবাবপত্র ধরে দাঁড়ানো

সোফা বা খাট ধরে শিশু উঠে দাঁড়াবে এবং সাইড দিয়ে হাঁটবে (Cruising)।

  • পুষ্টি: মায়ের দুধের পাশাপাশি দিনে ৩ বার প্রধান খাবার এবং ২ বার নাস্তা দিন। ফলের রস না দিয়ে আস্ত ফল চটকে দিন।

১১তম মাস: কথা বলা ও অনুকরণ

'বাবা', 'মামা', 'দাদা'—অর্থবোধক শব্দ বলতে শুরু করবে। আপনি যা করবেন, সে তাই অনুকরণ করবে।

  • বই পড়া: শিশুর হাতে শক্ত মলাটের ছবির বই দিন। ছবি দেখিয়ে নাম বলুন। এতে তার শব্দভাণ্ডার বাড়বে।

১২তম মাস: প্রথম জন্মদিন ও হাঁটা

শুভ জন্মদিন! এক বছরে অনেক শিশু স্বাধীনভাবে হাঁটা শুরু করে, আবার কারও ১৫-১৬ মাসও লাগতে পারে।

  • পারিবারিক খাবার: ১ বছর হলে শিশু পরিবারের সবার সাথে বসে সাধারণ খাবার (অল্প ঝাল-লবণ যুক্ত) খেতে পারবে।

  • গরুর দুধ: ১ বছর পূর্ণ হলে ডাক্তাররা গরুর দুধ দেওয়ার অনুমতি দেন। তবে মায়ের দুধ ২ বছর পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত।

সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

১. ডায়পার র‍্যাশ: গরমে বা দীর্ঘক্ষণ ভেজা ডায়পারে থাকলে র‍্যাশ হয়।

  • সমাধান: প্রতিবার ডায়পার বদলানোর সময় স্থানটি ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। জিংক অক্সাইড যুক্ত ক্রিম লাগান। দিনের কিছুটা সময় ডায়পার ছাড়া খোলা হাওয়ায় রাখুন।

২. কোলিক বা পেটে গ্যাস: শিশু যদি অকারণে পা ভাঁজ করে প্রচণ্ড কাঁদে, তবে বুঝবেন গ্যাস হয়েছে।

  • সমাধান: খাওয়ার পর পিঠে চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলান। পেটে ক্লক-ওয়াইজ ম্যাসাজ করুন বা সাইক্লিং ব্যায়াম করান।

৩. খাবার খেতে অনিহা: দাঁত ওঠার সময় বা অসুস্থ হলে শিশু খেতে চায় না।

  • সমাধান: জোর করবেন না। তরল খাবার বা সুপ দিন। খিদে পেলে সে নিজেই খাবে।

প্রচলিত কিছু কুসংস্কার (Myths) বনাম বাস্তবতা

  • মিথ: বাচ্চার চোখে কাজল দিলে চোখ বড় হয়।

    • বাস্তবতা: কাজল চোখের জন্য ক্ষতিকর। এতে থাকা সীসা শিশুর স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।

  • মিথ: জন্মের পর মধু খাওয়ালে মুখের কথা মিষ্টি হয়।

    • বাস্তবতা: ১ বছরের নিচের শিশুকে মধু খাওয়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে 'বটুলিজম' নামক মারাত্মক রোগ হতে পারে।

  • মিথ: মাথা কামালে চুল ঘন হয়।

    • বাস্তবতা: চুলের ঘনত্ব জেনেটিক বা বংশগত। বারবার মাথা কামালে চুলের ফলিকল নষ্ট হতে পারে।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

প্রশ্ন: বাচ্চাকে কখন পানি খাওয়ানো শুরু করব?
উত্তর: ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর সলিড খাবার শুরুর সাথে সাথে ফোটানো পানি বাচ্চার তৃষ্ণা অনুযায়ী খাওয়াবেন।

প্রশ্ন: এসি চালালে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগবে?
উত্তর: না। রুমের তাপমাত্রা ২৬-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে বাচ্চার জন্য আরামদায়ক। তবে সরাসরি এসির বাতাস যেন বাচ্চার গায়ে না লাগে।

প্রশ্ন: বাচ্চার ওজন বাড়ছে না, কী করব?
উত্তর: বাচ্চার ওজন চার্টে ঠিক থাকলে চিন্তার কিছু নেই। ওজন বাড়াতে খিচুড়িতে বাটার, ঘি, বা ডিমের কুসুম মেশাতে পারেন। জিনগত কারণেও অনেকে ছিপছিপে হয়।

উপসংহার

শিশুর বেড়ে ওঠার এই যাত্রায় কোনো তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব গতিতে বড় হয়। পাশের বাসার বাচ্চার সাথে নিজের বাচ্চার তুলনা করে হতাশ হবেন না। মা হিসেবে নিজের যত্ন নিন, কারণ আপনি সুস্থ ও হাসিখুশি থাকলেই আপনার সন্তান ভালো থাকবে। এই ১২ মাসে অনেক রাত জাগতে হবে, অনেক ক্লান্তি আসবে, কিন্তু বাচ্চার মুখের এক চিলতে হাসি আপনার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।

প্যারেন্টিং কোনো প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি সুন্দর ভ্রমণ। সঠিক তথ্য জানুন, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন এবং আপনার মাতৃত্ব/পিতৃত্ব উপভোগ করুন।

“TrustShopBD (www.trustshopbd.com) হলো বাংলাদেশে ‘শিশুর যত্ন ও বেবি প্রোডাক্টস’ সম্পর্কিত সব প্রিমিয়াম এবং অথেনটিক পণ্য কেনার সেরা জায়গা। ডায়পার, বেবি স্কিনকেয়ার থেকে শুরু করে ফিডিং এক্সেসরিজ—সবই পাবেন এখানে। দ্রুত ডেলিভারি, বিশ্বস্ত মান এবং চমৎকার কাস্টমার সার্ভিসের জন্য আজই ভিজিট করুন।”

https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Genus.webp

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *